নামাজের মধ্যদিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শাপলা চত্বর মসজিদ খুলে দিলেন এমপি হিরো


বার্তা বিভাগ প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৭, ২০২৪, ৩:১০ অপরাহ্ন /
নামাজের মধ্যদিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শাপলা চত্বর মসজিদ খুলে দিলেন এমপি হিরো

নিজস্ব প্রতিনিধি:-

নরসিংদীর শাপলা চত্বর বাজার জামে মসজিদ দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) এমপি মুসুল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য খুলে দিলেন।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) স্থানীয় মুসুল্লি ও আলেম ওলামাদের সাথে নিয়ে তিনি এ মসজিদ খুলে দেন। পরে তিনি কয়েক হাজার মুসুল্লি ও আলেম ওলামাদের সাথে নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ আদায় পূর্বে
কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নরসিংদীর সভাপতি ও দারুল উলুম দত্তপাড়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শওকত হোসেন সরকার এর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্যে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো এমপি বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর। মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে মার্কেট চলে আমরা কোন সমাজে বাস করি? ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবে না, একজন মুসলমান হিসেবে তা মেনে নিতে পারি না। যখন শুনেছি কিছু অসাধু ব্যক্তি মসজিদকে ব্যবহার করে তারা নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য মুসুল্লিদের নামাজ আদায় বন্ধ করে দিয়ে মসজিদের মার্কেটের ভাড়া তুলে খাচ্ছেন এবং মসজিদকে নিজের সম্পদ হিসেবে ব্যবহার এবং মসজিদের ভিতর অপবিত্র করে রেখেছেন তখনই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের এবং আলেম ওলামা ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে মসজিদ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর মসজিদ বন্ধ থাকবে তা মেনে নেওয়া যায় না। যারা এধরণের জঘন্য কাজ করেছেন তারা আল্লাহ ও সমাজের কাছে অপরাধী। তারা মসজিদ নিয়ে রাজনীতি করতে চায়। মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখানে কোনো রাজনীতি চলবে না। আজ থেকে মসজিদ কমিটির মাধ্যমে মসজিদ পরিচালিত হবে। যারা মসজিদ নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে চান তাদের সুদয় বুদ্ধির উদয় হোক। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন ভূঁইয়া, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, বৌয়াকুড় মেরাজুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ঈমাইল হোসেন নূরপুরী, নরসিংদী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আলী আহম্মেদ হোসেনী প্রমুখ।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মসজিদ কমিটি ও মাজহাব নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে মসজিদটি বন্ধ করে দেন কতিপয় মাঈন উদ্দিন গংরা। মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে তারা মসজিদের মার্কেট চালু রাখেন। নিয়মিত মার্কেটের দোকানগুলো থেকে ভাড়া আদায় করতেন। এবিষয়ে আমরা স্থানীয় সাবেক জনপ্রতিনিধির সাথে বহু বার কথা বলেছি যেন নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদটি খুলে দেন। কিন্তু তিনি একপক্ষকে খুশি রাখার জন্য আমাদেরকে এতদিন তিনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আল্লাহর ঘর উন্নয়ন ও মুসুল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য একজন ভাল মানুষের মাধ্যমে মসজিদটি আজ খুলে দেওয়ায় আল্লাহর নিকট শুকরিয়া।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে মুসুল্লিরা জোহরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মুসুল্লি ও স্থানীয়দের সাথে উৎসুক জনতার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন, আশরাফ হোসেন সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাত্তার ভূঁইয়া, এসএম কাইয়ুম, রিপন সরকার, কায়কোবাদ হোসেন কানু, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ সহ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে মসজিদের ভিতর ও দোতলা সহ আশপাশের রাস্তায় কয়েক হাজার মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করেন।উল্লেখ, মসজিদ পূর্ণ নির্মাণ হওয়ার পরপরই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালে কমিটির দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ ছিলো মসজিদটি। মসজিদটি দোতলা বিশিস্ট। নিচতলায় রয়েছে মার্কেট। ২০১৬ সালে মসজিদ কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে হঠাৎ করেই মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং মসজিদের মেইন গেইট তালাবদ্ধ করে মুসুল্লিদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবিষয়ে এলাকাবাসী সহ আলেম ওলামারা বহুবার সমাধানের চেষ্টা করেও গেইটের তালা খুলতে ব্যর্থ হোন। মসজিদের ভিতর ২/৩ হাজার মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করা সম্ভব। মসজিদ খুলে দেওয়ার জন্য স্থানীয় মুসুল্লি ও এলাকাবাসী সাবেক মেয়র সহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা করতে না পেরে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) এমপির নিকট মসজিদটি খুলে দেওয়ার দাবী করেন। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নজরে আসলে তিনি মসজিদটি আজ বুধবার জোহর নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণার ফলে এলাকাবাসী ও মুসুল্লিদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।