জুমার নামাজ আদায় করতে শাপলা চত্বর মসজিদে মুসুল্লিদের ঢল


বার্তা বিভাগ প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৯, ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন /
জুমার নামাজ আদায় করতে শাপলা চত্বর মসজিদে মুসুল্লিদের ঢল

নরসিংদী প্রতিনিধি :-

নরসিংদীর শাপলা চত্বর বাজার জামে মসজিদে দীর্ঘ ৭ বছর পর জুমার নামাজ আদায় করতে মুসুল্লিদের ঢল নামে। মসজিদটি দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ থাকার কারণে যেখানে মুসুল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) নরসিংদী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি রবিউল ইসলাম বয়ান ও খুতবার মধ্যদিয়ে জুমার নামাজ পরিচালনা করেন। এসময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন ভূঁইয়া, পৌর কাউন্সিলর মাহবুব ভূইয়া, সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোঃ বাচ্চু অংশ নেন।
নামাজের পূর্বে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আগত মুসুল্লিদের বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এটা কোনো রাজনীতির জায়গা নয়। আল্লাহর ঘর মসজিদ আবাদ করতে হবে। আবাদ করতে জেলা পরিষদ, মাননীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো ও উপজেলা পরিষদ থেকে সাধ্যমত সহযোগিতা করা হবে। এ মসজিদ দেখবালের দ্বায়িত্ব এলাকাবাসীর। কেন এ মসজিদ দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ ছিলো তা আপনারা ভাল জানেন। যারা আল্লাহর ঘর বন্ধ করে রেখেছি তারা কারা তাও আপনার জানেন এবং তাদেরকে চিনেন। এ মসজিদটি খুলে যখন পরিস্কার করতে যায় তখন এর ভিতর কয়েক বস্তা ফেন্সিডিলের খালি বোতল, জ্বলন্ত সিগারেটের অংশ, খালি ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। আল্লাহর ঘর তারা অপবিত্র করে রেখেছিলেন। আজ থেকে এ মসজিদ কেয়ামত পর্যন্ত মুসুল্লিরা নামাজ আদায় করবেন এবং নরসিংদীতে আর কোথাও কোনো মসজিদ বন্ধ রাখা যাবে না। যারা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
নামাজে আসা একাধিক মুসুল্লি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর নিকট লাখ কোটি শুকরিয়া দীর্ঘ ৭ বছর পর শাপলা চত্বর মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে আসলাম। কয়েকজন ব্যক্তি তাদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ও মসজিদের নাম ব্যবহার করে মসজিদের সম্পদ ও অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য তারা মসজিদটি বন্ধ করে রেখেছিলেন। নিয়মিত মসজিদের মার্কেট চালু থাকলেও মসজিদ বন্ধ রেখে সেখানে রাজনৈতিক কর্মকান্ড, নেশা এমনকি মানুষদের ধরে নিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করা হতো। এগুলো আমাদের চোখের সামনেই হতো। কিন্তু আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারতাম না। তারা প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থাকতো।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৭ বছর পর এ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুসুল্লিদের মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২ টার মধ্যে মসজিদের নিচতলা ও দোতলা মুসুল্লিদের বসার স্থান পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। মুসুল্লিরা ভিতরে বসার জায়গা না পেয়ে মসজিদের সামনের সড়ক ও আশপাশের গলিগুলোতে নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন। পরে কয়েক হাজার মুসুল্লির উপস্থিতিতে শাপলা চত্বর এলাকায় সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ আদায় করা হয়।
উল্লেখ, মসজিদ পূর্ণ নির্মাণ হওয়ার পরপরই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালে কমিটির দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘ ৭ বছর বন্ধ ছিলো মসজিদটি। মসজিদটি দোতলা বিশিস্ট। নিচতলায় রয়েছে মার্কেট। ২০১৬ সালে মসজিদ কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে স্থানীয় মাঈন উদ্দিন প্রধান হঠাৎ করেই মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ করেন এবং মসজিদের মেইন গেইট তালাবদ্ধ করে মুসুল্লিদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন। এবিষয়ে এলাকাবাসী সহ আলেম ওলামারা বহুবার সমাধানের চেষ্টা করেও গেইটের তালা খুলতে ব্যর্থ হোন। মসজিদের ভিতর ২/৩ হাজার মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করা সম্ভব। মসজিদ খুলে দেওয়ার জন্য স্থানীয় মুসুল্লি ও এলাকাবাসী সাবেক মেয়র সহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা করতে না পেরে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) এমপির নিকট মসজিদটি খুলে দেওয়ার দাবী করেন। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নজরে আসলে তিনি মসজিদটি ১৭ জানুয়ারি বুধবার জোহর নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মসজিদ খুলে দেন।